ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,
সময়: ১১:৩৭:৩৪ PM

‘সাদা বিষ’ ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল!

ডেস্ক নিউজ।। দৈনিক সমবাংলা
20-09-2024 11:37:34 PM
‘সাদা বিষ’ ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল!

হামাসের সঙ্গে ইজ়রায়েলের যুদ্ধের পাঁচ দিন কেটে গিয়েছে। দু’পক্ষের লড়াই ভয়ানক থেকে আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে। হামাসের হামলায় ইজ়রায়েলে যেমন মৃত্যুমিছিল চলছে, তেমনই ইজ়রায়েলের পাল্টা হামলায় ক্রমে লাশের স্তূপে ভরে উঠছে গাজ়া।মুহুর্মুহু রকেট হামলা চলছে ইজ়রায়েলের মাটিতে। ইজ়রায়েলেও সেই হামলা প্রতিরোধের পাশাপাশি একের পর এক বিমানহানা চালাচ্ছে। দু’পক্ষের এই লড়াইয়ে অভিযোগ উঠছে, গাজ়ায় হামলা চালাতে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল। আর এই বোমা ব্যবহার ঘিরেই নতুন বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে।হামাসের হামলা ঠেকাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োগ করছে ইজ়রায়েল। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “হামাসকে এই পৃথিবী থেকে একেবারে মুছে ফেলব।”হামাসের বিরুদ্ধে মারাত্মক ফসফরাস বোমা ব্যবহার ইজ়রায়েলকে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্নের মুখে ফেলছে। যদিও এই ধরনের বোমা ব্যবহারের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে নেতানিয়াহুর দেশ।কী এই সাদা ফসফরাস বোমা? এই বোমা ব্যবহারের ফলে কী কী প্রভাব ফেলতে পারে? এই ধরনের বোমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল বহু বছর আগেই। কিন্তু হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ঘন জনবসতি এলাকায় এই ধরনের বোমা ফেলার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে প্যালেস্তাইন।মোমের মতো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এই সাদা ফসফরাস। অনেক সময় এর রং হলুদও হয়। ঝাঁঝালো এবং পচা রসুনের মতো সেই গন্ধ।এই রাসায়নিক পদার্থটি অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই আগুন ধরে যায়। জল দিয়েও সেই আগুন নেভানো যায় না। আর এটাই এই রাসায়নিকের অন্যতম ভয়ানক বৈশিষ্ট্য।এই রাসায়নিক অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসার ফলে যে বিক্রিয়া হয়, তাতে দ্রুত অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে এই ধরনের বোমা যেখানে ফেলা হয়, সেখানে আগুন ধরে যাওয়ার পাশাপাশি, বাতাসের অক্সিজেনও দ্রুত শেষ হয়। ফলে এই রাসায়নিক সৃষ্ট আগুনের হাত থেকে কেউ বেঁচে গেলেও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় তাঁর।এই রাসায়নিক যত ক্ষণ অক্সিজেনের সংস্পর্শে থাকবে তত ক্ষণ জ্বলতেই থাকবে। এই রাসায়নিক শরীরকে ভয়ানক ভাবে পুড়িয়ে দেয়। শুধু তাই-ই নয়, এই রাসায়নিক চামড়া, মাংস ভেদ করে শিরা-উপশিরা এমনকি হাড়ের মধ্যেও ঢুকে যায়।ফসফরাস বোমার ব্যবহারে ৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। তার সঙ্গে তৈরি হয় সাদা ঘন ধোঁয়াও। মাটিতে পড়ার পরই দ্রুত আগুন ছড়ায় এই বোমা। যা সামাল দেওয়া মুশকিল হয়। ফলে এর প্রভাব দ্রুত এবং অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে ওঠে।কেউ যদি এই বোমার সংস্পর্শে এসেও বেঁচে যান, তিনি ভয়ানক সংক্রমণের শিকার হন। আয়ু এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়। চামড়া ভেদ করে রক্তে মিশে যায় এই বোমার বিষ। ফলে হৃদ্‌যন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি-সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তার জেরে শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে সেই ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাদা ফসফরাস বোমার যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে এই ধরনের বোমা ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। এমনও দাবি করা হয়, সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার ছাড়াও জেনেবুঝে জার্মানির বসতি এলাকাগুলিতেও এই বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরাক যুদ্ধের সময়েও এই বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল আমেরিকার সেনার বিরুদ্ধে।ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এই বোমার ব্যবহারের অভিযোগ বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। ২০০৬ সালে লেবানন যুদ্ধের সময় হেজ়বোল্লার বিরুদ্ধে এই ধরনের বোমা ব্যবহার করেছিল ইজ়রায়েল। বহু মানবাধিকার সংগঠন এমনও অভিযোগ তুলেছে যে, ২০০৮-’০৯ সালে গাজ়া যুদ্ধের সময় এই বোমা ব্যবহার করেছিল ইজ়রায়েল।সিরিয়ার বাশার-আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধেও ফসফরাস বোমা এবং রায়াসনিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া গত বছরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক অভিযান চালায়, সেই অভিযানেও এই ফসফরাস বোমার যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।এই বোমার মারাত্মক প্রভাবের কথা ভেবে ১৯৮০ সালে জেনিভা কনভেনশনে সাদা ফসফরাস বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পাশাপাশি বলা হয়েছিল, কিছু ক্ষেত্রে এই বোমার ব্যবহার করা যাবে। ‘কনভেনশন অন সার্টেন কনভেনশনাল ওয়েপন’ যে প্রোটোকল তৈরি করেছিল তাতে এই বোমার কম ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। সে বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে ১১৫টি দেশ স্বাক্ষরও করেছিল।ওই প্রোটোকল অনুযায়ী স্থির হয়েছিল যে, যদি কোনও বসতি এলাকায় এই বোমা ব্যবহার করা হয়, তা হলে সেই ঘটনাকে রাসায়নিক হামলা বলে চিহ্নিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হতে পারে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও করা হতে পারে।হামাসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে যে ফরফরাস বোমার ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে তদন্ত করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সত্যিই কি এই বোমার ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল? যদি ব্যবহার করে থাকে, তা হলে কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হবে, এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে।