প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন,'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি’র কোন কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না, তবে কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং নিজের দলের সন্ত্রাসীদেরকে আশকারা দেয়ার সামিল। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই—বিএনপি’র কর্মসূচি পূর্ব ঘোষিত, অথচ একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তিসভা কিংবা শান্তিমিছিল করলে তখন কি জনদূর্ভোগ হয় না ? বিএনপি’র কর্মসূচির দিন কেন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে ? কেন আওয়ামী লীগ ‘৭১ এর শান্তিকমিটির মতো শান্তি সমাবেশ বা শান্তিমিছিল করে ? এটি করার উদ্দেশ্য—বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের বাধা প্রদান করা, হামলা করা এবং তাদেরকে হত্যা ও জখম করা।
মঙ্গলবার(২৫ জুলাই)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন,'বিএনপি’র চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচির ওপর সরকারী দলের সন্ত্রাসীদেরকে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। দেশের জেলা সদর ও মহানগরসহ হাটবাজার—গঞ্জে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি কয়েক দিনে দেশের অধিকাংশ স্থানে পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যৌথ প্রযোজনায় হামলা চালিয়েছে। আর এই হামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেউ নিহত হয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছেন, কেউ হাত পা হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের ‘সম্পূরক শক্তি’ হিসেবে কাজ করছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,'জনগণের আস্থাহীন এই অবৈধ সরকার সন্ত্রাস, হামলা এবং মামলার এক শৃঙ্খল তৈরী করে দেশের জনগণকে বন্দী করে রেখেছে এবং গণতন্ত্রকে অন্ধকার কুপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আসলে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বহুমত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা শুনলেই আওয়ামী লীগ মূর্ছা যায়। আওয়ামী নীতি নির্ধারকরা দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নির্মূল করে নব্য বাকশালী ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার মতলব আঁটছে। সেই কারণে বিএনপি’র গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলা চালিয়ে তারা একটি সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে।
রিজভী বলেন,'বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়া, রক্তাক্ত হামলা চালানো প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ সরকারী সন্ত্রাসীদের পক্ষে পক্ষপাত দেখায় অথবা তাদের সাথে যোগ দেয়। আর এই ভয়ঙ্কর সর্বনাশা সহিংস সন্ত্রাসের জন্য দায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার নিয়ন্ত্রিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রক্তাক্ত হামলায় মেতে উঠে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরও বলতে চাই—২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি’র ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের কর্মসূচির ঘোষনা দেয়ার পরপরই যুবলীগের ২৪ জুলাইয়ের সমাবেশ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই করা হলো কেন ? এর কি জবাব আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ? কোন অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই যুবলীগের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। বন্ধুরা, শুধু আওয়ামী সন্ত্রাসীরাই আশকারা পাচ্ছে না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে গায়েবী মামলা, মিথ্যা মামলা ও মৃত মানুষের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন,'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অপরিণামদর্শী ও অবিমৃশ্যকারী, তার এই বক্তব্য দিনকে দিন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জনজীবনে বিদ্যমান অশান্তি ও দূর্ভোগের জন্য দায়ী ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরা ক্ষমতায় থাকলে কখনোই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ থাকে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন,'আগামী ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পূণপ্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ সফল ও সার্থক করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিএনপি’র ১ দফা দাবির সাথে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপি’র মহাসমাবেশে মানুষের স্বত:স্ফুর্ত ঢল নামবে।
সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা এবং মামলার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন,'কুমিল্লা জেলাধীন লাকসাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সফিউল্লাহ ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রায়হান ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশে অংশগ্রহণ করায় গত ২১ জুলাই রাত ৯টায় হেলমেট পরা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পৌরসশহরস্থ তাদের বাড়িতে খুঁজতে যায়। বাড়িতে তাদের না পেয়ে লাকসাম ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন তাদের পুরাতন লৌহজাত দ্রব্যাদির দোকানে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হানা দেয়। দোকানে তখন উপস্থিত ছিলেন সফিউল্লাহ ও রায়হানের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সিয়াম হোসেন মনা। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কিছু না বলেই মনাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরবতীর্তে রাত ৩টার দিকে পৌর শহরের গন্ডামারা গ্রামের উম্মুলকোরা মাদ্রাসার সামনে সিয়াম হোসেন মনার লাশ পাওয়া যায়।
এসময় তিনি হাবিবুল ইসলাম হাবিব,শেখ রবিউল আলম রবি,সাইফুল আলম নিরব,মিয়া নুর উদ্দীন অপু,রফিকুল আলম মজনুআব্দুল মোনায়েম মুন্না,আলী আকবর চুন্নু,এস এম জাহাঙ্গীর,ইউসুফ বিন জলিল,কামাল উদ্দিন,গোলাম মাওলা শাহিন আজিজুর রহমান মুসাব্বির সহ আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করেন।
১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আহত, নিহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংখ্যা জানিয়ে রিজভী আরও বলেন,
আহত = প্রায় ৪, ১০০’র অধিক
*নিহত ২ জন।এছাড়াও গত ১৯ মে হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ঃ—
মোট মামলা ৩১৫টি
মোট গ্রেফতার ১৩৫০টি
মোট আসামী প্রায় ১,২০০’র অধিক নেতাকর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল,চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস,বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর শরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।