
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও জুলাই গণহত্যায় জড়িত দলটির নেতা-কর্মীদের বিচার দাবিতে শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতার সমাবেশে হাসনাত এ ঘোষণা দেন।তার ঘোষণার পর উপস্থিত আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন এবং বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ করেন। এসময় ওই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সমাবেশে হাসনাত বলেন, অভ্যুত্থানের এতদিন পর আমাদের বোঝাতে হচ্ছে কেন নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে কোন কারণে রাজনৈতিক দল মনে হয়? তিনি বলেন, (নিষিদ্ধের বিষয়ে) প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। অধ্যাপক ইউনূস, আলোচনা করতে হবে শহীদ ওয়াসিমের মায়ের সঙ্গে, আবু সাঈদের বাবার সঙ্গে, মুগ্ধের ভাইয়ের সঙ্গে। যাদের রাজনৈতিক কারণে (হাসিনার সরকার) তুলে নিয়ে গিয়েছে, তাদের সঙ্গে। ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তারা ১৯৭৪ সালে বাকশাল কায়েম করে এদেশে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। সারাদেশে সন্ত্রাস কায়েম করে জাসদের ৩০ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছিল। ১৯৭৪ সালে লুটপাটের কারণে ১৫ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।
তিনি বলেন, ইতিহাসের পরতে পরতে তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে। তারা ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০০৯ সালে ভারতের সহায়তায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।
১০০ ফেরাউন ও নমরুদকে একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন হাসনাত।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমাদের বলা হয়, বিদেশ থেকে নাকি ইনক্লুসিভ ইলেকশনের (অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন) চাপ আছে। কিন্তু ২০১৪ সালে যখন বিএনপি অংশ নেয়নি, তখন ইনক্লুসিভ নির্বাচন কোথায় ছিল? রাতের ভোটের (২০১৮) সময় ইনক্লুসিভ নির্বাচন কই ছিল?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিদেশের প্রেসক্রিপশনে রাজনীতি হবে না। হাসিনা নরেন্দ্র মোদীর বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন। আমরা দেশের হিস্যা মানুষের কাছে তুলে দিতে চাই।
তিনি বলেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আরও যদি একবছর সময় প্রয়োজন হয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ব না।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ থেকে পালান দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, ওই অভ্যুত্থানে হাসিনার নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলাসহ সহিংসতায় এক হাজার চারশ’ জন নিহত হন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তাদের বিচার দাবিতে সোচ্চার অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছাত্র-জনতা।
বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে চুপিসারে আওয়ামী লীগ আমলের দুইবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের প্রেক্ষাপটে দলটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরদার হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্লাটফর্ম এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়েও প্রশ্ন তোলে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টায় যমুনার সামনে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
সকালে ওই কর্মসূচি থেকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বড় সমাবেশের ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এজন্য যমুনা ভবনের পাশেই মিন্টো রোড সংলগ্ন ফোয়ারার কাছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পাঁচটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। জুমার নামাজের পর সেখানেই এই সমাবেশ হয়।