ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৪:১৭:২৪ PM

প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ,নেপথ্যে মন্ত্রীর ছেলে

স্টাফ রিপোর্টার ।।দৈনিক সমবাংলা
23-11-2024 04:17:24 PM
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ,নেপথ্যে মন্ত্রীর ছেলে

স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ছেলেরা রাহাত মালেকের নির্দেশে আইন আদালতকে তোয়াক্কা না করে বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আবুল খায়ের। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লি: ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল শুভ উদ্ভোধন হয়ে বিগত ১৬ বছর ধরে কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়াই সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করে আসছে। কম খরচে উন্নত চিকিসা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়মিত চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত। ৫০জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত চেম্বার করে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় এত কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা আর কেউ দিতে পারেনি। ফলে প্রতিদিন হাজারো রোগী এখানে সেবা নিতে ভীড় করতো। একদিকে করোনা অন্যদিকে ডেঙ্গু মহামারীতে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। তারা রোগ নির্ণয় করতে পরীক্ষা করাতে পারছে না। ফলে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। সেখানে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে একটি কুচক্রি মহল বেআইনিভাবে বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের নির্দেশেই তা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে আইন আদালতকে তোয়াক্কা করা হয়নি, শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক তা করা হয়েছে। আমাদের এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও ভবনটি দখল করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল কোন কিছু না জানিয়ে হঠাৎ প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে ২২মে, পিছনের ১৮ মে এর তারিখ দেখিয়ে একটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য; অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি; মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিযোগ আনা আনা হয়। একই সঙ্গে কোন প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আপিল করলে তা অগ্রাহ্য করে ৭ই জুন ২০২৩ইং তারিখে আমাদের চিঠি দেয়। পরে নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। রিটটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট খুললে সেটির শুনানি হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্ব্যাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলের ঘনিষ্ট ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তা ক্রয় করেছে। অথচ এই সম্পত্তির দাম ৪৫ কোটি টাকার বেশি হবে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আরেকটি কথা, নামমাত্র মূল্যে এই সম্পত্তি কিনে নিলেও তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার কোনো নোটিশ দেয়নি। বরং তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে এই প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই বিগত ১৬ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি সকল নিয়মকানুন মেনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দখলের জন্য এবং এক ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণেই বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ৫০জনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের পরিবারের প্রায় ১০০০ সদস্য এখন না খেয়ে মরার উপক্রম। এছাড়াও হাজারো মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটি খুলে দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বাড়িটি ক্রয় বিক্রয়ে যে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।