রাজধানীতে ডেঙ্গু বিস্তার রোধে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের চরম ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের পাশে থাকাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য চার দফা কর্মসূচি নিয়েছে দলটি।শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনে গত নির্বাচনে ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর ডেঙ্গু বিস্তারে ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।ডেঙ্গু রোগী চিকিতসায় বিএনপির কর্মসূচি’ # ব্লাড ড্রাইভ কর্মসূচি : দলের নেতা-কর্মীরা রক্ত দেবে, অন্যকেও রক্ত দিতে উতসাহিত করা হবে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজনীয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
# অনলাইনে সেন্ট্রালাইজড ‘ব্লাড ইনফরমেশন ডিপোজেটারি’ ওয়েবসাইট চালু করা হবে। যতদিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি থাকবে এই সেবা চালু থাকবে। এর মাধ্যমে যার যে গ্রুপের রক্ত জরুরী প্রয়োজন তা দ্রুত পাবার ব্যবস্থা থাকবে।
# এডিস লাভা ধবংস করতে এবং ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্ত হতে ওয়ার্ড পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ এবং, পোস্টার প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচার-প্রচারণা করা হবে।
# এডিস মশা উতপাদনের বড় ক্ষেত্র সরকারি স্থাপনা ও নির্মাণাধীন বিল্ডিংসমূহ। সেগুলোকে চিহ্নিত করে তা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য জনগনকে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জলাবন্ধতা দূরীকরণে এলাকাবাসীকে নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘‘ ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হতে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা, এডিস লার্ভা যেখানে জন্ম হয় সেই জায়গাগুলো নষ্ট করে দেয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করাৃ আমরা দেখছি যে, প্রিভেন্টিভ পার্টে কোনো কাজই করা হচ্ছে না। আমরা যদি জলমাধ্যম থেকে শুরু করি, বিভিন্ন পাইপ, পরিত্যক্ত টায়ার, পুরনো গাড়ি, মেশিনপত্র চিন্তা কোনো কিছুই কিন্তু ভাঙা হচ্ছে না। অথচ সেখানে পানি জমে জমে অন্ধকারে ভেতরে লার্ভাকে আরো উতসাহ দেয়া হচ্ছে গ্রো করার জন্যে।”
‘‘ ইতিমধ্যে আমি বলতে পারি ‘তামাশা‘র অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। হাঁস ছাড়া হয়েছে বিভিন্ন লেকে, মাছ ছাড়া হয়েছে, ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে এবং দেখানোর জন্য কিছু লেক বা খালের পাশে-পাশে কিছু ঘাস কাটা হয়েছে।মশক নিধনে কার্য্ক্রম চলছে অবৈজ্ঞানিকভাবে। ব্যবহার করা হচ্ছে অকার্য্কর, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ।”
ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘‘ আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে পরিস্থিতি তাতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, গত ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।বর্তমানে মেয়র পদে চেয়ার দখল করে যারা আসীন রয়েছেন ৃ তাদের ব্যর্থতার কারণে আজকে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে।তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে, জনগনের কাছে তাদের জবাব দিতে হয় না বলেই আজকে এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।”
‘‘ সার্বিকভাবে দুষন রোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা আজকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য অন্যতম একটি কারণে। এরফলে অতিমাত্রায় পরিবেশ দুষণ ঘটেছে এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে অধিকতর বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে এডিস মশার মাধ্যমে এবং এই মশার প্রজনন হয় জমে থাকা পানি। পর্যাপ্ত বর্জ্য নিষ্কাশন না করার ফলে ময়লা-আর্বজনার মধ্যে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লাগামহীন বিস্তার ঘটেছে। শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু এলাকায় তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করেছেন যেখানে উচ্চ বিত্তরা থাকেন। এর বাইরে রেস্ট অব দ্য ঢাকা সিটিতে তাদের নজর নাই।”
তিনি বলেন, ‘‘ আসলে মেয়র পদটাকে নগরপিতা বলা হয় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ। আমি মনে করি, যারা এই পদে বসে আছেন তারা এর গুরুত্ব বুঝে না, নগর পিতার যে ভুমিকা সেটা রাখা তো দূরের কথা বরঞ্চ তারা স্বৈরাচারি মনোভাব নিয়ে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছে।”
‘‘ তারা বিশেষজ্ঞদের মতামতকে সম্পূর্ণ রুপে উপেক্ষা করছে তারা তাদের নিজেদের মনগড়া কিছু কার্য্ক্রম করছেন, কিছু লোকদেখানো কার্য্ক্রম করছে। এখানে ড্রোন উড়ানো হয়েছে, আরও অন্যান্য উদ্ভট কিছু কর্মসূচি দিয়েছে ৃএটা জনগন ভাওতাবাজী বলে মনে করছে।”
দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের ‘আয়তন ও জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ’ নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইশরাক।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিদেশে সফর ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের চাকুরির মেয়াদ আবারও বৃদ্ধি, রাজধানীতে বিদ্যুত-গ্যাস,-পানি সংকটসহ নাগরিক সেবার না পাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরে সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়ের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক ডা. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।