ঢাকা, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৭:৫৪:১৮ PM

ঢাকাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে সাশ্রয়ী সেবা থেকে

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
08-11-2025 02:05:02 PM
ঢাকাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে সাশ্রয়ী সেবা থেকে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে মোট ৫০টি কমিউনিটি সেন্টার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র বর্তমানে অব্যবহৃত, সংস্কারাধীন বা দখলে রয়েছে। ফলে সাধারণ নাগরিকরা বিয়ে, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য স্বল্প ভাড়ায় এসব সেন্টার ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দক্ষিণ সিটিতে বেশি কেন্দ্র বন্ধ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে রয়েছে ৩৫টি কমিউনিটি সেন্টার ও দুটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি কমিউনিটি সেন্টার ও একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠান হয়। বাকি ২৩টি কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত, দখলকৃত, বা সংস্কারের জন্য বন্ধ রয়েছে।

ডিএসসিসির সমাজকল্যাণ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সেগুনবাগিচা, পল্টন ও ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেগুলো তখন থেকে বন্ধ আছে। ধানমন্ডি কমিউনিটি সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

বাসাবো ও কামরাঙ্গীরচর কমিউনিটি সেন্টার বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দখলে। গুলিস্তানে শহীদ মতিউর পার্কের কাজী বশির মিলনায়তনে সংস্কারকাজ চললেও তা অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে।

সূত্রাপুরের জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু থাকলেও মিলনায়তনের অধিকাংশ চেয়ার ভাঙা। এ কারণে সেখানে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। সমাজকল্যাণ বিভাগ ৪০৮টি নতুন চেয়ার, স্টেজ মেরামত ও লিফট স্থাপনের চাহিদা জানিয়েছে।

আজিমপুর, হাজি গণি সরদার, তিলপাপাড়া ও ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার করপোরেশনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মুগদা কমিউনিটি সেন্টারের অংশ বিশেষে থানা স্থাপন করা হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন না।

গেন্ডারিয়া, নবাবগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, ধলপুর ও রোকনপুরের সেন্টারগুলোর বেশিরভাগ এসি, ফ্যান, টয়লেট ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট। টাইলস, বেসিন ও পানির পাইপও অচল হয়ে পড়েছে।

ঢাকা দক্ষিণের সমাজকল্যাণ বিভাগ জানিয়েছে, শহীদ নগর, হাজি জুম্মন, মাজেদ সরদার, শায়েস্তা খান ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ কমিউনিটি সেন্টারসহ বেশ কিছু কেন্দ্র পুনর্নির্মাণাধীন।

একজন নাগরিক মিরাজুল ইসলাম বলেন, “শহীদ নগর কমিউনিটি সেন্টারটি খোলা থাকলে ১৫-২০ হাজার টাকায় সুন্দর অনুষ্ঠান করা যেত, এখন বেসরকারি সেন্টারে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।”

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, “যেসব কেন্দ্র সংস্কার শেষ হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

উত্তর সিটিতে ১৩টির মধ্যে ৮টি চালু

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ও আব্দুল হালিম কমিউনিটি সেন্টারে নিয়মিত অনুষ্ঠান হয়।

খিলগাঁও ও রায়েরবাজার সেন্টারে সংস্কারকাজ চলছে, আর বনানী, মধুবাগ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সেন্টারগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দখলে রয়েছে।

মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার সংস্কারের পর কিছুটা আধুনিক হলেও ভেতরে পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাসিন্দা ইকরামুল ইসলাম বলেন, “ভেতরে ভ্যাপসা গন্ধ আসে, টয়লেটও পরিষ্কার না। এগুলো ঠিক করলে সেন্টারের চাহিদা বাড়বে।”

তত্ত্বাবধায়ক মশিউর রহমান জানান, “এখানে সেন্ট্রাল এসি রয়েছে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় আরও নজর দেওয়া হচ্ছে।”

একটি হল ভাড়া নিতে দিনে ২১ হাজার ১৫০ টাকা ও রাতে ২৪ হাজার ৬০০ টাকা, আর দুটি হলে দিনে ৪৫ হাজার ৭৫০ ও রাতে ৫২ হাজার টাকা দিতে হয়।

ডিএনসিসির সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, “আমাদের চালু কেন্দ্রগুলো আধুনিক ও সেবাযোগ্য। নাগরিক সন্তুষ্টি বৃদ্ধির জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

নাগরিকদের প্রত্যাশা

নগরবাসীর দাবি, দ্রুত সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে এসব কমিউনিটি সেন্টার জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পাবেন, এবং বেসরকারি সেন্টারের ওপর নির্ভরতা কমবে।