ঢাকা, সোমবার, ৫ মে ২০২৫,
সময়: ০৪:৩১:৩৭ AM

প্রসঙ্গ:তারেক রহমান নিয়তির সন্তান

ড. বি এম শহীদুল ইসলাম
04-05-2025 07:27:15 PM
প্রসঙ্গ:তারেক রহমান নিয়তির সন্তান

ব্রিটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ নিউজ ম্যাগাজিন চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে। যার শিরোনাম ‘ডেসটিনি’স চাইল্ড’ বা 'নিয়তির সন্তান'। দ্য উইক ম্যাগাজিনের নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজা’র লেখা ওই শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারকর্তৃক বিএনপি ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘দ্য উইক’-এর চলতি সংখ্যার কাভার স্টোরি ‘ডেসটিনি’স চাইল্ড’ পাঠকের উদ্দেশ্যে বিশ্লেষণসহ তুলে ধরা হলো। 

বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানকে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে তারেক রহমানের জন্য। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সমর্থকদের কাছে ‘তারেক জিয়া’ নামে পরিচিত। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র। মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা জেনারেল জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের দিকে নিয়ে যায়।

৫৭ বছর বয়সী তারেক এখন তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেয়ার পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ঢাকায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক রহমানের জন্য, যিনি ভার্চুয়ালি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন, ঢাকায় নামার পর তার জীবনে পূর্ণ চক্র সম্পূর্ণ হবে। খালেদা জিয়া আশা করছেন, তারেকই আসন্ন নির্বাচনে দলের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হবেন।তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, তারেক রহমান এরই মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এবং তারেকের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, চাকরি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষক, শ্রমিক বা শ্রমজীবী যেই হোক না কেন, আমরা তাদের সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিতে চাই। আমরা একটি জ্ঞান ভিত্তিক ও উন্নয়ন কেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই। সব নজর এখন থাকবে এ দিকে যে, কতটা দক্ষতার সঙ্গে তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে সক্ষম হবেন যখন তিনি ঢাকায় নামবেন।

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, তিনি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সামরিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্ব তার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে তিনি ভবিষ্যতে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না। এটি ছিল তার রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন।১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবুও তিনি বিএনপিতে প্রভাবশালী থেকে যান এবং দলকে একত্রিত রাখেন। আসিফ আলী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দল ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। 

২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্র্নিবাচিত হন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার মায়ের কারাবরণের পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, তারেক বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

তারেক ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু পরে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, যদিও বিএনপি সরকার গঠন করে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন এবং বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। এই সময়ে তিনি দলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব অর্জন করেন। তবে মায়ের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ এবং সরকারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়।

২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং তারেক তার মায়ের সঙ্গে বন্দি হন। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়। তারেক ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য প্যারোলে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান।

বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেকের জন্য একটি সুযোগ, যাতে তিনি তার পূর্বসূরিদের ধারা ভেঙে নিজস্ব একটি উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেন। তবে প্রশ্ন হলো তিনি কেমন নেতা হবেন?

তবে 'দ্য উইক'-এর নিউজকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ পুরোপুরি সমর্থন করেন না। কারণ এ প্রতিবেদনের মধ্যে অনেক অসত্য তথ্য উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। হয়তো তারেক রহমান নিজেও এটি সমর্থন করেন না। কারণ তিনি একজন দুর্দশী নেতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনি প্রচারে সক্রিয় হন। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমান ২০০১ সালের নির্বাচনের অনেক পরে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন এবং বলা যায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মতো সিনিয়র নেতাদের টপকে দলের এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। এতে তার যোগ্যতার প্রমাণ বহন করে কি করে না, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তিনি যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞগণের অভিমত। কারণ তার মা বেগম খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী এবং দলের চেয়ারপারসন থাকার সুবাদে তাকে সরাসরি এ পদে নিযুক্ত করেন। কিন্তু তারেক রহমান এখন একজন যোগ্য রাজনীতিবিদ বলে আমরা মনে করি। এখন ভেবে দেখুন তিনি কেমন নেতা হবেন?

তবে তিনি রাজনীতিতে যতদিন সক্রিয় আছেন, তাতে তার রাজনৈতিক দুর্দশিতা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকণ মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রায় সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে তারেক রহমানের সম্যক ধারণা রয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক পলিসি সম্পর্কেও তারেক রহমান দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠালে বেগম খালেদার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে তারেক রহমানই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারেক রহমানের নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশে চিরতরে ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বের অবসান ঘটবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সে প্রত্যাশা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেটাই এখন দেশবসী দেখার অপেক্ষায় আছেন।

ূূূূূূূূূূলেখক: শিক্ষাবিদ গবেষক ও কলামিস্ট। 
০৪/০৫/২৫