ঢাকা, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫,
সময়: ০১:২৩:০৫ AM

বাঞ্ছারামপু‌রে রাস্তা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০

জেলা সংবাদদাতা।। দৈনিক সমবাংলা
09-04-2025 12:04:57 PM
বাঞ্ছারামপু‌রে রাস্তা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০

জুম্মা নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হতেই ধারালো রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয় ভেলানগরের হাবিবুর রহমানকে (২০)। এতে গুরুতর জখম হয়ে প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে কোনো রকমে নিজের বাড়িতে গেলে তখনও হয়নি রক্ষা। সেখানে হাবিবের মাসহ তাদের পরিবারের ৬ সদস্যকে কুপাতে থাকে বেশ কয়েকজন। পরে তাদের উদ্ধার করে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সবাই। নিরাপত্তা হীনতায় বাড়ি ছাড়তে হয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যদের।  শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এই ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর বড়বাড়ির চৌরাস্তার মোড়ে। আর এঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ একে অপরকে দায়ী করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায়। কুপানোর ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ভেলানগর গ্রামের মৃত সুজ্জু মিয়ার ছেলে কামরুল (৩৬), জাকির হোসেনের ছেলে নিরব (২২), আব্দুল কাদির মিয়ার ছেলে সাইদুল (২২), সেন্টু মিয়ার ছেলে শিহাব (২২), মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মানিক (৫৫) ও মানিক মিয়ার ছেলে আশিক (১৮)। 
বাড়িতে গিয়ে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় ১১ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেন হাবিবুরের চাচাতো ভাই নূর মোহাম্মদ অলি।
অন্যদিকে,কামরুল গং -ও আল-আমিন সহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।

থানার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নূর মোহাম্মদ অলিদের বাড়ির চলাচলের রাস্তা নিয়ে বিবাদের জেরে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত কামরুল, নিরব, সাইদুল, শিহাবরা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা গড়ালে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে কামরুল-শিহাবরা। বেশ কয়েকদিন ধরেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন তারা। এরই মধ্যে ঈদুল ফিতরের দিন কামরুল বাহিনী হাতুড়ি, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অলির স্বজন হুমায়ূন কবিরের দ্বিতল ভবনে গিয়ে ভাঙচুর করে। এসব করেও ক্ষান্ত হননি তারা। 

অভিযোগপত্রে অলি আরো বলেন, শুক্রবার (৪ এপ্রিল) জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আমার চাচাতো ভাই হাবিবুরকে রাস্তায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে কামরুল, নিরব, শিহাব ও মানিক মিয়া। এসময় কোনো রকমে দৌড়ে প্রাণ বাঁচাতে হাবিবুর নিজের বাড়িতে গেলে সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। পরে তাকে বাঁচাতে গেলে আমিসহ (অলি) আমার বাবা দুলাল মিয়া, মা সুফিয়া বেগম, চাচি শিল্পী বেগম, হাবিবুরের মা সেনোয়ারা বেগমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে প্রতিবেশিরা ডাক-চিৎকার শুনে এগিয়ে আসলে কামরুল-শিহাবার আমাদের পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। 
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ির চলাচলের রাস্তা নিয়ে উভয়পক্ষের বিবাদ চলছে। এর মধ্যে ঈদের দিন এই সূত্র ধরে হঠাৎ হুমায়ূন কবিরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তার ছেলেকে মারধর করে কামরুলসহ তার পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। সংঘর্ষ এড়াতে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়ে যায় পুলিশ। তবে তা অমান্য করে আবারও শুক্রবার প্রতিপক্ষের উপর অতর্কিত হামলা চালায় কামরুল পরিবার। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেশ কয়েকবার মহড়াও দেন তারা। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা আর ভীতি বাড়ছে এলাকাবাসীর।
হামলার বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদ অলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি আমার ভাইসহ বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছি। তাদের সবার অবস্থা গুরুতর। এরমধ্যে আমি থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেদিনও কামরুল বাহিনী আমাকেসহ সাথে থাকা তিনজনকে মারধর করে উপজেলা সদরে। কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে আমি ঢাকায় আসি। আমাদের সবাইকে জানে মেলে ফেলার হুমকি দিয়েছে তারা। এখন কোন ভরসায় বাড়ি ফিরবো?
একদিকে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর শঙ্কায় পরিবারের সবাই, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকি চলছেই, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই, না হয় তারা যে কোনো সময় হাসপাতালে এসেও মেরে ফেলবে আমাদের।
অন্যপক্ষের কামরুলের ছোট বোন ফারজানা আক্তার বলেন,কামরুলসহ আমাদের পরিবারের ৪/৫ জনকে পিটিয়ে  আহত করেছে আল আমীন এর লোকজন । আমাদের তেমন কোন দোষ নাই। কথা-কাটাকাটির জের ধরে উভয় পক্ষ মারামারি করেছে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন কামরুলের মোবাইলে ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
ঘটনা বিষয়ে জানতে ভেলানগর গ্রামে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই হাসপাতালে। বাকিরা প্রাণে বাঁচতে ঠাঁই নিয়েছেন অন্য কোথাও। বাড়িতে নারী ছাড়া কোনো পুরুষ কে পাওয়া যায়নি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুলাল মিয়া, হাবিবুর রহমান ও শিল্পী বেগম। তাদের কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। 
ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরেই কামরুলের নেতৃত্বে বেপরোয়া হয়ে উঠে তার পরিবারের লোকজন। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ১০ জনকে রাস্তায় মারধর করে তারা। প্রবাসে থেকে এর উস্কানি দেন তার ভাই জাকির। এভাবে চলতে থাকলে কেউ রেহাই পাবে না। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কামরুল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
একাধিকবার হামলা, পুরো পরিবারের নিরাপত্তার ঝুঁকি, থানার সামনে মারধর ও সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল)  বলেন, আমি উভয় পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।