বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি ঘটনায় মহানগর ও জেলার নেতাদের মধ্যে অন্তর্কলহ দৃশ্যমান হয়েছে। এই কলহ নির্বাচন পর্যন্ত গড়াবে কি না, তা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত ও বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষের সমর্থকরা দাবি করছেন, সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। যে যাঁর দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন দলটির বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু প্রতিদিন একটি-দুটি করে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নির্বাচনী কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচি চলছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়ের সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়েই।
গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বরিশালে আসলে বরিশাল আ.লীগের একাংশ সাদিক বিরোধীরা আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ।
দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর সমথর্কেরা। ফলে গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে খায়ের আবদুল্লাহর পাশে নেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা। এমনকি ৩০টি ওয়ার্ডের নেতারাও সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশ ছাড়া নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগে বড় ধরনের বিভাজন তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এই বিভেদ ঘোচাতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করার উদ্যোগ নেন খায়ের আবদুল্লাহ। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
দলের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়ের সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে গেলে ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে এর জবাবে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আফজালুর করিম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী একসঙ্গে আছেন। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সবাই একসঙ্গে আছেন। এ নির্বাচনে তাঁর (সাদিক আবদুল্লাহর) অনুপস্থিতি বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারবে না।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দেওয়ার সময়ে মেয়রপন্থির কেউ ছিলেন না। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ও পেশার লোকজনের সঙ্গে এই পর্যন্ত অর্ধশত মতবিনিময় সভা করেছেন। এগুলোর কোনোটিতেই সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন না। তাঁকে বাদ দিয়ে এভাবে কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় জন্ম দিচ্ছে।
বরিশাল নির্বাচনী শান্ত মাঠকে অশান্ত করে তুলেছেন সাদিকপন্থি মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের কর্মীদের কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় ১৪ মে রোববার গভীর রাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসার পেছন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাসহ তার ১০ কর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি রাত ১টার দিকে নিশ্চিত করেন কাউনিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এসআই সাইদুল হক।
মেয়র সাদিকপন্থী ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহমেদ মান্না’র বিরুদ্ধে এর আগেও গত ৫ মে নৌকার প্রার্থীর অনুসারীদের অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি ধামকি দেয়ায় কাউনিয়া থাকায় ১৭ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো।
মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নার পক্ষে মহানগর আ.লীগের একাংশ দলিয় কার্যালয়ে ১৫ মে সারে ১১ টায় সংবাদ সম্মেলন করেন। যদিও ইতিমধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্মেলনে মহানগর আ.লীগের সভাপতি এ.কে.এম জাহাঙ্গীর হোসেন দাবি করেন যে ঘটনায় মান্নাসহ কর্মীদের আটক করা হয়েছে সেখানে সে ছিলো না। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আ.লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানান।
সাম্প্রতিক এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় বরিশালে আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহ দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন প্রচারণা কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন নৌকার সমর্থকদের মধ্যে
অন্তর্কলহ ও বিভাজনের কারণে দেশরতœ শেখ হাসিনার নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা দুরূহ হয়েছে যাবে।
আবুল খায়ের আবুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আমিন উদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই সমীকরণটা এখন খুব স্পষ্ট। এটা অবশ্যই খুব সহজে সম্ভব নয়। তারপরও আমরা আন্তরিকভাবে চাইব, অন্তর্কলহ দুর হোক। সকলে ঐক্য হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মতো দুঃখজনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি এখানে ঘটুক।