রাজধানীতে এবার যৌথ শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগের ৩ অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েত ঘটিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। আগামী বৃহস্পতিবার পূর্ব ঘোষিত বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিন এ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনগুলো। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান নেতারা। কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এ শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ সমাবেশকে বিএনপি’র মহাসমাবেশের পাল্টা বলতে নারাজ তারা। বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সূত্র বলছে, বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিন নিজেদেরও শক্তির জানান দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর জন্য মূল সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার না করে অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম ৩ সংগঠনকে সামনে রাখতে চাইছে দলটি। শান্তি সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতির জন্য বার্তা দেয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের। সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় সংগঠনগুলো।
দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীদের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে শাসকদলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে- শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ, তারুণ্যের জয়যাত্রা। সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তাই বৃহস্পতিবারের সমাবেশ নিয়েও সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। যদিও ৩ অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংঘাতের উস্কানি আমরা দেবো না। আমাদের পক্ষ থেকে সংঘাত হওয়ার শঙ্কা নেই। আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা কেন উস্কানি দেবো? আমরা বরাবরই বলে আসছি, আমাদের শান্ত থাকতে হবে। সংঘাত হলে আমাদের ক্ষতি। তবে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করলে নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব।
এদিকে এতদিন বিরোধীদের চলমান কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে অবহিত করে আসছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের সমাবেশকে ঘিরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ৩ অঙ্গ-সংগঠন। সেখান থেকে সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েতের ইঙ্গিত দেন নেতারা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপি’র মহাসমাবেশের পাল্টা নয়, বরং নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা মাঠে থাকবো। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রতি জনসাধারণের ব্যাপক সমর্থনের বিষয়টিও সমাবেশের মাধ্যমে দেখাতে চাই আমরা। আশা করছি এ কর্মসূচিতে বড় ধরনের জমায়েত ঘটবে। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের কর্মসূচি পালন করবো। কারও কর্মসূচিতে উস্কানি বা বাধা দেয়া হবে না।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াত দেশের এই অগ্রযাত্রা চায় না। তারা দেশকে পিছিয়ে রাখতে চায়। এ জন্য তারা দেশব্যাপী হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু যখন বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দ্বারপ্রান্তে তখন বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। এ দেশের জনগণ আর অগ্নিসন্ত্রাস দেখতে চায় না। নিখিল বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অগ্নিহত্যার ড্রেস রিহার্সেল হিসেবে তারা ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। এটা বিএনপি’র জন্মলগ্ন থেকেই পরিষ্কার চিত্র। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষকে গুম-হত্যা করে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন। এদিকে বিএনপি’র সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ করছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবো। সাপ্তাহিক কর্মব্যস্ততার দিনে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি স্থান জানালাম। পরে স্পট পরিবর্তন করতে পারি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।